ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
Biz Barta :: বিজ বার্তা
Place your advertisement here

শ্বাসরুদ্ধকর পাঁচ ঘন্টা- কি হয়েছিল সেদিন?

বিজবার্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২০  

এই সেই বনানীর সিকদার হাউস

এই সেই বনানীর সিকদার হাউস


তোর এতোবড় সাহস যে আমার কথার অমান্য করিস, গুলি করে জন্মের মতো খোড়া করে দিব’- এক্সিম ব্যাংকের এমডি হায়দার আলী খান এবং অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসনের পায়ের দিকে পিস্তল তাক করে এভাবেই হুমকি দেন সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার। বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউজ-এ নেবার পথে এই হুমকি দেয়া হয়।

 

উদ্দেশ্য, ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রস্তাবে অনুমোদন। জামানতের চেয়ে ঋণের অংক বেশি দাবী করায় শুরু হয় বিপত্তি। জমি দেখিয়ে ফেরার পথে বনানীর সিকদার ভবনের দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ তলায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং এএমডিকে নিয়ে দফায় দফায় হুমকি দিয়ে ঋণ প্রস্তাবে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এসময় নির্যাতনে অংশ নেন রন হক সিকদারের ভাই দিপু হক সিকদার।  

 

সার্বিক দিক তুলে ধরে ঘটনার ১২ দিন পর গুলশান থানার মামলা দায়ের করেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক লে. কর্ণেল (অব.) সিরাজুল ইসলাস-বিপি (বার)। মামলার এজাহারে বলা হয়, গেল ৭ মে ৫০০ কোটি টাকা ঋণের বন্ধকী সম্পত্তি দেখতে পূর্বাচলের বিভিন্ন এলাকায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং এএমডিকে পরিদর্শনে নিয়ে যান সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার। এসময় সঙ্গে ছিলেন সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ।

 

কয়েকটি স্থান দেখার পর সময় স্বল্পতার কারণে এক্সিক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ঢাকার ফিরতে তাগিদ দেন। তারপরও পূর্বাচলের সিকদার গ্রুপের পুরো প্রকল্প দেখতে আহবান জানালে, প্রকল্পটির ভেতরে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন এক্সিম ব্যাংকের এমডি। উপায় না দেখে এক সময় ঢাকার দিকে ফিরতে শুরু করেন। ৩০০ ফিট রাস্তায় এলে রন হক সিকদার এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে দেখে গাড়ি থামান। এসময় এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি বলেন, নির্ধারিত স্থানে না যাবার কারণে অত্যন্ত মনক্ষুন্নেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন রন হক সিকদার। সেখানেই মাফ চাইতে বাধ্য করেন।

 

এখানেই ঘটনার শেষ হয়নি। মামলায় উল্লেখ করা হয়, রন হক সিকদার তখন গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির দিকে পিস্তল তাক করে গুলি ছোড়েন। যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এমডির বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। তখন এএমডির দিকে গুলি করতে গেলে তিনি দৌড়ে গাড়ীর পেছনে আশ্রয় নেন। এসময় এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে গাড়ীতে করে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউস-এ নিয়ে যান।

 

এজাহারে বলা হয়, সিকদার হাউসে দফায় দফায় চলে হুমকি। রন হক সিকদার এক্সিম ব্যাংকের এএমডিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রতিকাঠা জমির দাম আড়াই কোটি টাকা আর তুই কেন বললি প্রতি বিঘার দাম আড়াই কোটি টাকা। এখনই তোকে শেষ করে ফেলবো।

 

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং এএমডির দুই পাশে দুইজন বিদেশি নিরাপত্তা কর্মীর পাহাড়ায় সিকদার হাউসের তৃতীয় তলায় এক সাথে বসিয়ে রাখা হয়। এসময় রন হক সিকদার এবং দিপু হক সিকদার প্রকল্পের সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী আছে বলে, অস্ত্র তাক করে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর না দিলে টর্চার সেলে নেবার হুমকিও দেয়া হয়।

 

ওইদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় দিপু হক সিকদারের নির্দেশে তাদের বাবা জয়নাল হক সিকদারের কাছে যান এবং সেখানে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ফটো সেশন করেন। পাঁচ ঘন্টা অস্ত্রের মুখে জিম্মি থেকে সন্ধা সাড়ে সাতটায় রন হক সিকদার ভবনের নিচে এসে এক্সিম ব্যাংকের নির্বাহী এবং ড্রাইভারদের কাছে কেড়ে নেয়া মোবাইল ফেরৎ দেন এবং সকলকে ছেড়ে দেন।     


Place your advertisement here
Place your advertisement here
Place your advertisement here
এই বিভাগের আরো খবর
Place your advertisement here