শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রকে নানান সুবিধা
বিজবার্তা রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ। নানা ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেয়া হচ্ছে। বৃদ্ধি করা হচ্ছে আমদানিও। পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনাই উদ্দেশ্য।
গেল এপ্রিলে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ধার্য করে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর তিন মাসের জন্য স্থগিত করে জুলাইতে ধার্য করা হয় ৩৫ শতাংশ শুল্ক। তারপর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ। নানামুখী উদ্যোগ নেয় সরকার। যা এখন স্পষ্ট হচ্ছে।
গম এবং বোয়িং কিনতে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তুলা, এলএনজি, সয়াবিনসহ একাধিক পণ্য আমদানিতেও দেয়া হবে গুরুত্ব। বাজেটেও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয় ১১০টি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের আমদানি শুল্ক। দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য কমাতেই মূলত এই উদ্যোগ।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, একক দেশ নির্ভরতা বহুপাক্ষিক বাণিজ্যে সংকট তৈরী করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপে ওলট-পালট পুরো বিশ্বের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। কঠিন চাপে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পণ্যের বড় গন্তব্য যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তাই শুল্ক ইস্যুতে চলছে দেনদরবার। যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে ঢালাও ছাড় দিচ্ছে সরকার।
বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই বেশি দাম হলেও বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানিতে চুক্তি করেছে সরকার। ৫ বছরের চুক্তিতে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ।
তারই অংশ হিসেবে সরকারি পর্যায়ে ২ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৫টি বিমানের চাহিদা দেয়া হলেও প্রতিযোগি দেশ কিনছে আরও বেশি। এতে ব্যয় দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
তুলা, এলএনজিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে সরকার। একই সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়াতেও দেয়া হচ্ছে নানান নীতি সহায়তা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাজেটে বড় ধরণের শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। কমিয়ে আনা হয় ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক। এছাড়া সম্পূরক শুল্ক প্রথ্যাহার করা হয় ৯টি পণ্যের। ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয় আংশিক।
এছাড়া ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমিয়েছে সরকার। অবাধে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশে আমদানির দ্বার উন্মুক্ত করা হয়।
পাল্টা শুল্কের খড়গ থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতা দৃশ্যমান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য কতো শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ হবে তা এখনও অস্পষ্ট।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি সুবিধা দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউতে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দেয় না। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা দেবার ক্ষেত্রে চিন্তা করা দরকার।
সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও তা কাজে লাগানো যায়নি।
তিনি বলেন, ভিয়েতনাম যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বার উম্মোচন করে দিয়েছে, তেমন ভাবে বাংলাদেশের করা সম্ভব না। তারপরও নানা কিছুতে সুবিধা দেয়া হয়েছে।