ঢাকা, ২৮ মার্চ, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
Biz Barta :: বিজ বার্তা
Place your advertisement here

বিদেশেও সংকটে ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম

বিজবার্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮  


ঢাকা : দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করে দেশে ‘ক্ষুদ্রঋণ’ মডেল চালু করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু দেশেই নানান বির্তকের মুখে এখন এই ঋণ কার্যক্রম। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ধরে রাখা, উচ্চ সুদ হার নির্ধারণ, ঋণের কিস্তির অর্থ উত্তোলনের কৌশল নিয়ে তৈরী হয় বিতর্ক।

শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও এখন বির্তকের মুখে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন স্কটল্যান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। নানা কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন দেউলিয়া। উপায় না দেখে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানের সব পরিচালক। এই ফাউন্ডেশনেরও ছয়জন পরিচালকের একজন ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, যেটি যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছিল।

বেশ কয়েকজন গ্রাহক তাঁদের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংকটে পরে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটিতে একজন আর্থিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি এখন সেটির সম্পত্তি বিক্রি করে যতটা সম্ভব দেনার বন্দোবস্ত করবেন। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল, যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করা, প্রাথমিকভাবে যা পশ্চিম স্কটল্যান্ড থেকে শুরু করা হয়।

কর্মকাণ্ড শুরু করার পর প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার মানুষের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে। কিন্তু অনেক ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটি সংকটের মধ্যে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি ও দেনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়া ডানকান এলএলপির কর্মকর্তা ব্রায়ান মিলনে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম এখন বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামীণ স্কটল্যান্ড ফাউন্ডেশন এখন আর তাদের ব্যবসা চালাতে পারবে না, যেহেতু তাদের ঋণের পরিমাণ অপূরণীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

তিনি বলেন, ঋণগ্রহীতাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় তিন লাখ পাউন্ডের ঋণ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ধসের কারণ হচ্ছে যে অনেক ঋণগ্রহীতা তাঁদের বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে সেটি আর্থিক অবস্থার ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে পড়ায় ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার আবেদন করেছেন পরিচালকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এখন বিতর্কিত। ঋণ দেয়া এবং উত্তোলন কার্যক্রমে সংস্কার আনা প্রয়োজন। তবে, বড় চিন্তা হচ্ছে অর্থায়ন। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে থাকে তাদের অর্থ সংস্থানের উৎস সংকুচিত হয়েছে। উচ্চ সুদ হারও এই কার্যক্রমের অন্যতম বাধা।  

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক একটি প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু করে। এটিকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কিত একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পে রূপান্তর করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক আইন ১৯৮৩-এর অধীনে ১৯৮৩ সালে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষায়িত ব্যাংক-এ পরিণত করা হয়।

গ্রামীণ ব্যাংক আয় বৃদ্ধি এবং সম্পদ সৃষ্টিমূলক কার্যক্রমের লক্ষ্যে একটি বড় জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে থাকে। এটি এর সদস্যগণকে গৃহনির্মাণ ঋণও প্রদান করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পায়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমান দাঁড়ায় ৯১.৯ বিলিয়ন টাকা যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় শতকরা ২৮ ভাগ বেশি।

গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমানে ৪৫ হাজারেরও বেশি গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে এ ব্যাংকটির ৯০ হাজারেরও বেশি ঋণসুবিধাভোগীই মহিলা। বাংলাদেশে গ্রামীণ-এর গোষ্ঠীভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণকারী বড় ধরনের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারীদের মধ্যে আছে এক মিলিয়নেরও অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি এনজিও ব্র্যাক এবং প্রায় পাঁচ লাখ সদস্যের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)।


Place your advertisement here
Place your advertisement here
Place your advertisement here
Place your advertisement here