পিপিলস লিজিং, টাকা ফেরত পাবে গ্রাহক…
বিজবার্তা রিপোর্ট
বিজ বার্তা
প্রকাশিত : ০৬:০১ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার
‘এখন আছে ৯০ কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থ। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে নতুন করে তহবিলে যুক্ত হবে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আগামী বছরে পিপিলস লিজিং-এর তহবিলে নতুন করে যোগ হবে ৩০০ কোটি টাকা। এই টাকা থেকে এক হাজার বিনিয়োগকারি ফিরে পাবেন তাদের আমানত।’
এমন আশ্বাস দিয়েছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হাসান শাহেদ ফেরদৌস।
শনিবার সকালে পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড-এ প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন-এ এমন আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।
দুর্নীতি এবং অনিয়ম করে এই প্রতিষ্ঠান থেকে লুট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষা দিতে বোর্ড গঠন করে দেয় হাইকোর্ট।
শতাধিক আমানতকারীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে বর্তমান এবং আগামি দিনের কর্মকান্ত নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন হাসান শাহেদ ফেরদৌস।
বলেন, ১০০০-২০০০-৫০০০ টাকার বিনিয়োগকারীদের আমানত ফেরত দেয়া হবে আগামি বছর। এরই মধ্যে সাড়ে ৫০০ জনের তালিকা তৈরী করা হয়েছে, হাইকোর্ট এসব ব্যক্তিদের অর্থ ফেরত দিতে অনুমতি দিয়েছে।
শুধু অর্থ ফেরত নেয়াই নয়। অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পুনরায় জমাও রাখতে চায়। বলা হয়, ৮০-৯০ কোটি টাকা এই প্রতিষ্ঠানে যার আছে, সে পুরো টাকা না নিয়ে ১০ কোটি টাকা শেয়ার রাখতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। সিটি সেন্টারের অফিস এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। বোর্ড অব ডিরেক্টর সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এতে কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে।
যারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ‘এক্সিট প্লাস তৈরী করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে। তারপরও টাকা তোলা গেলে নতুন ব্যবসা করা যাবে। এক্ষেত্রে হাউজিং ঋণ দেয়া হতে পারে। অল্প অল্প করে অর্থ ফেরত আসতে থাকবে। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে এই কার্যক্রম।
চেয়ারম্যান স্পষ্ট করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন চাপ দিচ্ছে, তাতে অনেকেই ভয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছে। তবে, এই ফেরত দেবার প্রবণতা খুবই ধীরগতি।
বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানের সব সিস্টেম নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আমরা ‘ব্যাংক অ্যান্টিমাস’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। যেখানে হিসেব রাখা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম আছে, ৫ লাখ টাকার ওপরে ঋণ দিতে হলে জামানত বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে বিনা জামানতে। লুট করা কোম্পানিকে রাতারাতি জাগানো যায় না। তিন চার বছর লাগবে। গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।
৩০ কোটি টাকা ব্যাংকে এককালিন স্থায়ী আমানত বা এফডিআর রাখা হয়েছে বলেও জানান বোর্ড চেয়ারম্যান। বলেন, যাতে যে কোন সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
পিপলস লিজিং-এ অর্থ আমানত রাখেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের বখতিয়ার। অনুষ্ঠানে বলেন, টপ ৫ জন খেলাপির কাছ থেকে অর্থ তোলা গেলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি পর্যায়ের গ্রাহকদের আমানত পরিশোধ করা যাবে। বলেন, শীর্ষ ২ জন খেলাপির কাছ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব।
পিপলস লিজিং আমানতকারীদের কাউন্সিলের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অপরাধিরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। বলা হয়, আমানতকারিদের অর্থ ফেরত না দিলে অস্থিরতা বাড়বে।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে পিপলসের অবসায়নের আবেদন করে।
গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় সে আবেদন অনুমোদন করলে ১০ জুলাই পিপলসের অবসানের বিষয়টি অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
একই বছরের ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা তোলার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে ছয় হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারী এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এই টাকার পুরোটাই পিপলস ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে।
এর একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আর এর পেছনে ছিলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।