শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১  

অর্থের টানাপড়েনেও বড় আকাঙ্খা

বিজবার্তা রিপোর্ট :

বিজ বার্তা

প্রকাশিত : ০৪:৩৭ পিএম, ১০ জুন ২০২০ বুধবার

ইচ্ছার কোন কমতি নেই। তবে অর্থের সীমাবদ্ধতার এক কঠিন বাস্তবতা। এ যেন সাধ আছে সাধ্য নেই অবস্থা। করোনার সংকটকালীন এই সময়ে তাই বিশাল ঘাটতি বাজেট তৈরী করেছে সরকার। যার আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের চেয়ে যা ৮ দশমিক ৫৬ ভাগ বড়। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির অংক ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিশাল অংকের বাজেট প্রস্তুত করা হলেও অর্থ প্রাপ্তির টেকশই নিশ্চয়তা নেই।

 

কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি সবাই। করোনা সংক্রমণ ওলট পালট করে দিয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ জীবন ধারণের সব দিক। তিন বেলা পেট ভরে খেয়ে মানুষের বেঁচে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ। এমন এক বাস্তবতায় আগামী ১১ জুন জাতির সামনে বাজেট তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করে তুলে ধরা হবে বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব। বাজেটের অংক বড় হলেও অর্থের যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে। অর্থায়ন কিভাবে হবে তারও সঠিক পথ স্পষ্ট নেই। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, জীবন জীবিকা স্বাভাবিক করে আনাটাই এখন মূল কাজ।  

 

অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে আয়ের দিক চূড়ান্ত করেছে সরকার। সেখানে দেখাযায়, রাজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়েও যা ৮ দশমিক ৬০ ভাগ বেশি। এর মধ্যে কর কাঠামো থেকে আসবে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও চলতি অর্থবছর থেকে বেশি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১০ ভাগের বেশি। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআরের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেখানেও লক্ষ্যমাত্রা চলতি বছরের সংশোধিত চেয়ে ৯ দশমিক ৮২ ভাগ বেশি। আর এনবিআর বহিৃভূত আয় হবে ১৫ হাজার কোটি এবং কর বহিৃভূত আয়ের লক্ষ্যমাত্র ধরা হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

 

অর্থায়নের ক্ষেত্রে সরকারের বড় ভরসার জায়গা ব্যাংক ব্যবস্থা। প্রস্তুতকৃত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি তিন ভাগের বেশি। তবে চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছেল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আর ব্যাংক বহিৃভূত খাত থেকে ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সংগ্রহ করা হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এবং ট্রেজারিবন্ডসহ অন্যান্য বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাপী করোনা সংকটের মধ্যেও আগামী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ আশা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়েও বেশি প্রায় ৪৫ ভাগ। 

 

বিশাল রাজস্ব আদায় লক্ষ্য নির্ধারণ না করতে অর্থসচিবকে চিঠি দিয়েছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। বলে ছিলেন, বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের সম্ভাব্য আদায়ের ১৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরলে এই আকার আড়াই লাখ কোটি বেশি হবে না। তাই রাজস্ব লক্ষ্য কমিয়ে নির্ধারণ দরকার। কারণ বিপর্যস্ত এই অবস্থায় আশানুরুপ রাজস্ব আদায় অসম্ভব। তিনি আরও বলেন, কর্মকর্তাদের ঘাড়ে বাড়তি রাজস্ব লক্ষ্য চাপিয়ে দিলে মানষিক চাপ তৈরী হবে। অনেকেই অসম্ভব বিবেচনা করে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারপরও বাজেটের অংক মেলানোর স্বার্থে এনবিআরের কাছে বড় রাজস্ব লক্ষ্যই ছুঁড়ে দিল সরকার।

 

ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করলে দেখাযায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী, এডিপিতে এবার ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালন ব্যয় হবে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। মূলধন ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এছাড়া বড় অংকের থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যা ব্যয় করা হবে বিভিন্ন খাতে।

 

বেশি বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ দশের মধ্যে নেই কৃষি ও সামাজিক নিরাত্তামূলক খাত। আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আর স্বাভাবিকভাবেই বরাদ্দ বৃদ্ধির হারে সবচে এগিয়ে থাকবে স্বাস্থ্যসেবা খাত। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সেখানে আগের বছরের চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩৪ ভাগ। তবে, বরাদ্দ কমতে পারে বিদ্যুত খাতে। দশ খাতে মোট বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।