রোববার   ১৩ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২৭ ১৪৩১  

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এগিয়ে গেছে অর্থনীতি

বিজবার্তা রিপোর্ট

বিজ বার্তা

প্রকাশিত : ০২:২৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

ঢাকা : আন্তর্জাতিক মহলের তেমন মনোযোগ ছাড়াই বিশ্বের অর্থনৈতিক সফলতার গল্পগুলোর একটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দ্রুত বিকাশমান প্রক্রিয়াকরণ খাতের, মধ্যে রয়েছে পোশাক খাত। চীনের পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় রপ্তানিকারক। অর্থনীতি প্রায় এক দশক ধরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রাখছে এবং এই অর্থবছরে তা ৭.৮৬ শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ঠিক করেছে সরকার।    

দ্য রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ: দি ইকোনোমি ইজ বুমিং, ডাজ শেখ হাসিনা ডিজার্ভ দ্য ক্রেডিট শিরোনামে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিষয়ক এই প্রতিবেদনকে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে জাপানের অর্থ-বাণিজ্যের সাময়িকী নিকেই এশিয়ান রিভিউ। তারা বলছে, তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য খাতের অগ্রগতি, মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, চীনের বিনিয়োগ এবং আসন্ন নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ তুলে রয়েছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে বলে প্রতিবেদনের শুরু করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুঃখ- কষ্টের জন্য। এখন বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটগুলোর একটি সামলাতে হচ্ছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে দমন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে এদেশে।

এর মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৪ সালে যেখানে গণহারে মানুষকে না খেয়ে মরতে হয়েছে, সেখানে দেশটি তার ১৬ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের জন্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৯ সাল থেকে তিনগুণ বেড়ে এ বছর ১৭৫০ ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, ওই সময়ে দৈনিক ১.২৫ ডলারের কম আয়ের অতি দরিদ্র মানুষের হার ১৯ শতাংশ থেকে কমে ৯ শতাংশের নিচে এসেছে।  

২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে বলে এ বছরের শুরুর দিকে জানায় জাতিসংঘ। তাদের এই স্বীকৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে নিকেই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ দেশের ভাবমূর্তির জন্য বিরাট অর্জন। ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে নিকেই এশিয়ান রিভিউকে তিনি বলেন, এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বেরিয়ে আসাটা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বাড়িয়েছেএটা শুধু রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, জনগণের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিকেই বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সরকারের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাক খাতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ হচ্ছে এবং এ বছর তা ৩৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ৩৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সরকারি লক্ষ্য অর্জনের পথেই আছে প্রবৃদ্ধির এই ধারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে ২০২১ সালে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেক শক্ত ভিত রেমিটান্সের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নিকের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। রেমিটান্সের প্রবৃদ্ধিও ১৮ শতাংশের মতো, ২০১৮ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  ১৫ বিলিয়ন ডলারে।

এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান দিয়ে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর এই দশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তারও প্রশংসা করা হয়েছে নিকেই প্রতিবেদনে। ওষুধ শিল্পকেও বিকাশমান একটি খাত হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।

বাংলাদেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সরকারের লক্ষ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হয়েছে, নির্মাণাধীন আছে ৭৯টি। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যাও এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহায়ক হবে বলে অভিমত উঠে এসেছে নিকেইর প্রতিবেদনে। তবে অর্থনৈতিক সূচকে এই শক্তিশালী অবস্থান ও উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার মধ্যে অনেক বাধাও রয়েছে, অবকাঠামোগত ঘাটতি থেকে শুরু করে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন পেছন থেকে তাড়া করছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক বিভেদের পিছু টানের বিষয়টি আরও সামনে চলে এসেছে।